হিজরাদের শিক্ষা এবং কাজের জন্য করা হল মাদ্রাসা। নাস্তিকদের কিছু ভুল ব্যাখ্যার জবাব।
হিজরাদের শিক্ষা এবং কাজের জন্য করা হল মাদ্রাসা। নিঃসন্দেহে এটা এই বছরের সবচাইতে শ্রেষ্ঠ ঘটনা। আলহামদুলিল্লাহ।

বহু বছর পরে এমন একটা খবর দেখলাম, নিঃসন্দেহে এটার চাইতে আনন্দের এবং মানবতাবাদী ঘটনা খুব কমই দেখেছি। জীবনের ঘাটে ঘাটে বঞ্চনা, অসহায়ত্ব, লাঞ্ছনা, অভাব, অবহেলা আর তিক্ততা নিয়ে বেচে থাকা এই অসহায় মানবগোষ্ঠীর জন্য সব সময় কষ্ট আর মায়া অনুভব করতাম। রাস্তায় ওদেরকে দেখলেই খারাপ লাগত যে, আহ, এই মানুষগুলোর কষ্ট বোঝার বা কমানোর মত কেউ নেই। আর এ কারনেই ওরা অনেক সময় জীবিকার তাগিয়ে রুক্ষ আর হিংস্র হয়ে যায়, মানুষের সাথে দূরব্যাবহার করে। কি করবে ? পড়ালেখার সুযোগ নেই, সামাজিক পরিচয় নেই, কিভাবে, কি খেয়ে বাচবে এই মানুষগুলো ? এজন্য বাধ্য হয়েই তারা বাচার তাগিদেই বেছে নেয় জীবনের রুক্ষ কঠিন আর হিংস্র পথ। ফলে কিছু মুসলিম দরদি এবং নিঃসন্দেহে মহান মনের মানুষের এই যে হিজরাদের জন্য ভাল কিছু করার উদ্যোগ, নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসার দাবীদার। এর মাধ্যমে অনেকগুলো কাজ হবে। সবচাইতে বড় যে দুটো কাজ হবে, তার একটা হও, এই মানুষগুলো তোঁ আল্লহকে না চিনে সরাসরি জাহান্নামের দিকে যাচ্ছিল। আজকে তারা আল্লহু সুবহানাহুকে চিনে তার দিকে ফিরে আসার একটা পথ পেল। আর ২য় হল যে, তারা আজকে কিছু হলেও শিক্ষা পাবে, যার কারন হয়ত তারা একটু হলেও তাদের জীবিকা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। তাদের জীবনের কষ্টগুলো একটু হলেও কমবে।

আরেকটা জরুরী পয়েন্ট আছে। সেটা হল, আমি অনেক নাস্তিকদের সাথে আলোচনা করার সময় তারা ইসলামে হিজড়াদের পজিশন নিয়ে অনেক ফালতু কথা বলত। তারা কিছু হাদিসের অপব্যাখ্যা করে বলে যে, ইসলাম নাকি সমস্ত হিজড়াদেরকে নির্বাসনে দিতে বলে। নাউজুবিল্লাহ। তারা যে হাদিস ইউজ করে, সেখানে তারা এটাই খেয়াল করে না যে, সেখানে শুধু সেই সব হিজরাদের কথা বলা হয়েছে, যারা অশ্লীল শব্দ বা বাক্য বা আচরন করে বা নষ্টামি করে। এবং যারা নারীর শারীরিক আকৃতি পাবার পরেও পুরুষের বেশ ধারন করে আবার পুরুষের মত শারীরিক আকৃতি পাবার পরেও নারীর বেশ ধারন করে। এছাড়া সাধারন অবস্থায় কোন হিজরাদের প্রতি যে কোন প্রকার নির্বাসন দেয়া বা তাদেরকে ছোট করা বা তাদেরকে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, সেটা এই মাদ্রাসা করার দ্বারা পরিস্কার ভাবে প্রমানিত হল। আমি সব সময় বলতাম যে, ইসলাম কখনো কোন হিজড়াকে আলাদা করে বা তাদেরকে ছোট করে বা তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কোন আইন করে নাই। আমরাও যা, তারাও তাই। হতে পারে তাদের শারীরিক অবস্থা আমাদের চাইতে ডিফ্রেনট, কিন্ত সেজন্য আল্লহ তায়ালা বা নবীজি তাদের সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যাবহার করা বা তাদেরকে ঘৃণা করা বা তাদেরকে সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দেবার কোন প্রকার বৈধতা দেন নাই। কিন্ত এসব মূর্খ নাস্তিকরা না জেনেই আন্দাজেই বেহুদা যত ফালতু প্যাঁচাল পাড়ত। আসলে এরা এক হল পড়াশুনা যথেষ্ট করে না আর অন্যদিকে যাও বা কিছু পরে, সেগুলোকে আবার ভুল ব্যাখ্যা করে পুরাই উল্টা বোঝে। এবং তাদের সবচাইতে নিকৃষ্ট মানসিকতা হল যে, তারা জিবনে কোন ভাল কাজের প্রশংসা করার মত উদার মন মানসিকতা রাখেই না। এজন্যই আল্লহ তায়ালা এদেরকে হেদায়াত ও দেন না এদের মনের শয়তানির জন্য। আমরা যেমন ভালকে ভাল বলি, খারাপ কে খারাপ বলি। কিন্ত এরা ভালকেও ওদের মূর্খতার জন্য খারাপ বলে প্রচার করে আর যেটা সবার কাছেই ভাল, এমনকি ওরা নিজেরাও বোঝে যে, এটা ভাল, সেটাকেও ভাল বলে স্বীকার করার মত না আছে সৎসাহস আর না আছে মুক্ত উদার মন। অথচ শয়তান ওদেরকে এই বলে ধোঁকা দেয় যে, তোরাই হইলি মুক্তমনা। এজন্য তারা আবার নিজেদেরকে মুক্তমনা বলে দাবী করে। অথচ এতদিন হিজরাদের বিষয় নিয়ে তারা এত মানবতাবাদী সাজার চেষ্টা করল ইসলামের হুকুম না জেনে বুঝেই, কিন্ত আজকে যে হিজড়াদের জন্য এত সুন্দর এবং মহৎ একটা উদ্যোগ নেয়া হল, একটা সিঙ্গেল নাস্তিককে দেখলাম না সেটার প্রশংসা করে একটা সিঙ্গেল পোস্ট করতে। এই হল এদের মুক্তমনা নামের ভণ্ডামি। এভাবেই এদের মুখের চাপাবাজি ধরা খায় আর এভাবেই এরা কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে ভয়ংকর ভাবে ধরা পড়বে আসমান জমিনের সেই অনন্ত সত্তার কাছে, যিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল জানেন। আহ, আফসোস এই সব জ্ঞানহীন মূর্খ ভাই বোনদের জন্য, যারা আজকে মুক্তমনা, মানবতা নামের মিথ্যা কথার ফুলঝুরির ধোঁকায় পরে নিজের ঈমানকে ধ্বংস করে চিরস্থায়ী জাহান্নামের দিকে চলে যাচ্ছে। আহ, এরা যদি শুধু তাদের এই ভয়ংকর মূর্খতার পরিনাম জানত বা বুঝত !!! আল্লহ তায়ালা এদেরকে সঠিক জ্ঞান এবং হেদায়াত দান করেন। আফসোস আফসোস।

কাজেই, ভাইয়া এবং আপুরা, প্লিজ, ফিরে এস সেই অনন্ত সুন্দর এবং অপরিসীম দয়ালু ও স্নেহশীল সৃষ্টিকর্তা আল্লহ তায়ালার দিকে এবং ছুটে চল সেই অন্তহীন সুখি জীবনের জন্য, যেখানে তিনি জান্নাতকে সাজিয়ে রেখেছেন তার আদরের এবং অনুগত বান্দা বান্দিদের জন্যই। প্লিজ।