Sunday, August 28, 2016

জান্নাতের মনোরম বাগান অথবা জাহান্নামের ভয়াবহ অন্ধকুপ


আমাদের সামনে আছে এক কঠিন ঘাটি , যেটা পার হতে হবে আল্লাহর প্রতি ইমান, ভাল কাজ দিয়ে। আর সেই ঘাটি হল জলন্ত জাহান্নাম।। নিশ্চয়ই জাহান্নামের আগুন ভয়াবহতম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।পৃথিবীতে আমাদের মহামহিম স্রস্টা খুব সামান্য সময়ের জন্য পাঠিয়েছেন এবং আমাদের এই পৃথিবীর সামান্য সময়ের মিশন শেষে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে সেই মহাজ্ঞানী, মহাপরাক্রমশালী আল্লহ জাল্লা শানুহুর কাছে... আর আমাদের এই পৃথিবীর কাজের বিনিময়েই সেখানে নির্ধারিত হবে আমাদের অনন্ত কালের সফলতা আর বার্থতা।  আমাদের মৃত্যুর সাথে সাথেই শুরু হওয়া যেই অনন্ত কালের যাত্রা, সেখানে পাড়ি দিতে হবে বহু বন্ধুর পথ, পেরিয়ে যেতে হবে বহু দুর্গম ঘাটি। আর সেই পথের শেষে যে মহামহিম স্রস্টা, তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন এই পৃথিবীতে ভাল কাজ করে যাবার জন্য। কারন তিনি কোন অন্যায় পছন্দ করেন না। তিনি মহাস্রস্টা, মহাজ্ঞানী। তিনি নিজের অনন্ত জ্ঞানের দারা সৃষ্টি করেছেন এই রহস্যাবৃত মহাবিশ্ব আর আমাদের মানুষদেরকে করেছেন এর আজ্ঞাবাহী। সেই মহাদয়ালু স্রস্টার আদরের কারনেই এই আসমান আমাদের মাথার উপরে ছাদের মত হয়ে আছে, পাহাড় নুয়ে থাকে বিনীত ভাবে এই মাত্র ৬ ফিট লম্বা, পিচ্চি পিচ্চি মানুষের কাছে, কোমল বাতাস ছুঁয়ে দিয়ে যায় এই আদমের বিরহী অন্তর, মেঘেরা তাদের ঝাঁপি খুলে অঝোর ধারায় নামায় শ্রাবণ ধারা ... মহাস্নেহশিল প্রভুর হুকুমে... এই আদম সন্তানের তৃষ্ণার্ত অন্তরকে কোমলতার পরশ বুলিয়ে দেবার জন্য। রক্তিম গোলাপ তার মায়াবী সৌরভ ছড়ায় এই আদমের ভালবাসার প্রয়োজনে আর রক্তাক্ত লাল সূর্য আকাশ বেয়ে গড়িয়ে চলে তাদের শীতার্ত কষ্টের রাত শেষে আশা আর নির্ভরতার প্রতিক হয়ে। বিশ্বব্যাপী এই যে মহাআয়োজনের ডালি সাজিয়ে দিয়েছেন মহাস্রস্টা তার আদরের সৃষ্টি আদমের সুখের জন্য, সেই স্নেহশীল, অভিজাত স্রস্টার সামনে তার চিররহস্যময় দরবারে যেদিন আমরা হাজির হব, সেদিন তো তিনি একমাত্র তার আদরের, সন্মানের পাত্র করবেন তাদেরকেই, যারা এই পৃথিবীতে সেই মহাস্রস্টার সৃষ্টিকুলের প্রতি ছিল ন্যায়নিষ্ঠ ও স্নেহশীল। যারা কাজ করেছে নিজের ও সমগ্র সৃষ্টির মঙ্গলের জন্য। এই ক্ষুদ্র সময় শেষে তাদেরকে যে আবার ফিরে যেতে তার "অরিজিন" বা উৎস... জান্নাতে। অথচ পথে ধোঁকার ঘর এই পৃথিবীর মায়ার জালে পড়ে অহংকার, কুমতলব আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরন করে অনেকে ছিটকে পড়ে যায় অনন্তকালের সফলতার মহাপ্রশস্ত সড়ক হতে... শুধু মাত্র সামান্য কয়েকদিনের জন্য নিজের এবং নিজের আত্মার লোভকে কন্ট্রোল না করতে পারার কারন। কাজেই আমাদেরকে খুব শান্ত ভাবে, যুক্তিসহ চিন্তা করা উচিত যে, আমরা আমাদের আগামী দিনের সেই ভয়াবহ বিপদসঙ্কুল কবরের ঘড়ের এবং তার পরবর্তী সব বিস্ময়কর এবং কারো কারো জন্য অচিন্তনীয় ভয়ংকর বিপদজনক ঘাটি গুলো পার হবার জন্য কি এই পৃথিবীর খুব সামান্য সময়ের জীবনকে ভাল কাজে লাগাব নাকি বোকার মত এই অল্প সময়ের জীবনে আমাদের মহাস্রস্টাকে ভুলে, আমাদের নিজেদের মনের ইচ্ছামত জীবনকে যা খুশী তাই বেহুদা কাজে লাগিয়ে, লোভের বশবর্তী হয়ে সব অন্যায় আর পাপের কাজ করে নিজেদেরকে আগামী মৃত্যুহীন অনন্তকালের জীবনকে চূড়ান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে অনন্ত কাল আফসোস , পরিতাপ আর ভয়াবহ সাস্তির মধ্যে কাটাব নাকি নিজে ভাল হয়ে, আশেপাশের সবাইকে ভাল করার চেষ্টা করে নিজে এবং নিজেদের প্রিয়তম সব মানুষগুলোকে নিয়ে অনন্তকালের জন্য চিরবসন্ত, চিরসবুজ, অভাবহীন এক অবিশ্বাস্য রাজকীয় জীবনের সৌভাগ্যবান মালিক হয়ে যাই আর মৃত্যুহীন, চিরযৌবনা সেই জীবনে আমাদের পাশে পাই আমাদের প্রিয় সব বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, স্নেহের মা, শ্রদ্ধেয় বাবা, আদরের ভাই, বোন, প্রিয় ইয়ার-দোস্ত সবাইকে... অনন্ত কালের জন্য সাথি হিসেবে।

আর... সবচাইতে বড় পাওয়া, কল্পনার অতিত সেই সৌভাগ্য, সেই মহামহিম স্রস্টার সান্নিধ্য... যার শুরু হবে কিন্ত কখনও আর শেষ হবে না। কালের চাকা সেখানে গিয়ে নির্বাক বিস্ময়ে থেমে যায়, থেমে যায় সময়ের সব স্রোত... কারন তিনিই তো সময়ের মহাস্রস্টা। এবং তিনি তো কখনও কোন প্রকার অন্যায়কারীকে ভালবাসেন না। তিনি সুবহান... অর্থাৎ মহাপবিত্র... কোন অসুন্দর, পাপের জিনিষকে তো তিনি সমর্থন করতে পারেন না। এটা আমদেরকে মনে রাখা উচিত সব সময়।  কাজেই এই মুহূর্ত থেকেই আর পাপের কাজে, বাজে, ধ্বংসাত্মক, মানবতার জন্য ক্ষতিকর এমন কোন কাজে না গিয়ে বরং এখনও সময় থাকতে থাকতে ভাল কাজ করি, নিজেদের ভুল গুলোকে সংশোধন করে নেই এবং মানুষের মঙ্গলের এবং নিজের, পরিবারে, দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করে অনন্ত কালের জন্য অভাবহীন, ক্লান্তিহীন, মনোরম চিরশান্তির আলয়... "জান্নাতুল ফিরদাউসে" প্রবেশ করি আল্লহ জাল্লা জালালুহুর সন্মানিত মেহমান হিসেবে... নিজে এবং আমাদের প্রিয় মানুষগুলো সহ ...  আমাদের পরম সন্মান, শ্রদ্ধা আর ভালবাসার স্বত্বা যিনি, যিনি রাজত্ব ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক এই সমগ্র আসমান, জমিন এবং এর ভিতরে বাইরে যা কিছু আছে... সেগুলো সব কিছুর... সেই মহামান্য স্রস্টার  রাজকীয় বন্ধুত্ব ও আপনজনের বেশে।



আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষ কি এটা ভেবে রেখেছে যে তাকে আমি অনর্থক সৃষ্টি করেছি ? মানুষ কি নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না ? সে কি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে নাকি তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে ? তোমরা একদিন ছিলে প্রাণহীন , সেখান থেকে আমি তোমাদেরকে জীবন দান করেছি এবং আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন । 

...যে জানে আর যে জানেনা, এই দুজন কি কখনও সমান হতে পারে ???

...অন্ধ আর চক্ষুমান ... এই দুজন কি কখনও এক ?

...অথবা জীবিত আর মৃত ??...তোমরা সামান্যই অনুধাবন কর !

হে মানুষ, কোন জিনিষ তোমাকে তোমার মহান প্রভুর থেকে গাফেল করে রেখেছে ??? !!!
হে মানুষ, ভয় কর তোমাদের প্রতিপালক স্রস্টাকে, যার কাছেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তন।

...আর ভয় কর সেই দিনকে, যেদিন পিতা তার পুত্রের কোন কাজে আসবে না আর পুত্রও কাজে আসবে না তার পিতার। যেদিন চন্দ্রকে নির্বাপিত করে ফেলা হবে। আর আকাশকে গুটিয়ে ফেলা হবে, যেভাবে তোমরা গুটিয়ে নাও কাগজ পত্র। আর সেদিনের ভয়াবহতার কারনে স্তন্নদানকারিণী মা ভুলে যাবে তার বাচ্চাকে।

...যেদিন জাহান্নামকে প্রজ্বলিত করা হবে...

স্থাপন করা হবে ন্যায়বিচারের মানদণ্ড,

আর যেদিন জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে...

... ... ... আপনি কি জানেন কোন সেই দিন ??? ... ... ... সেটা বিচার দিবস।

... ... "ইয়াওমাল কিয়ামা"... ...

সেদিন মানুষ জানবে যে, সে এই দিনের জন্য পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়ে কি পাঠিয়েছিল নিজের জন্য :( :( :(



No comments:

Post a Comment